নারায়ণগঞ্জের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী এমআরটি-২ (মেট্রোরেল) প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করা। কিন্তু কোনো এক অজুহাতে এই প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে নারায়ণগঞ্জকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ফলে এই দাবী ঘিরে সোচ্চার হয়ে ওঠে জেলার জনগণ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন এবং আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালান এমআরটি-২ (মেট্রোরেল) প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। তাঁর ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আসছে মেট্রোরেল সংক্রান্ত সুখবর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই নারায়ণগঞ্জের মানুষও মেট্রোরেলে চড়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন,
“আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ একটি মিটিং করবে। সেই মিটিংয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে—লাইন ডাইরেক্ট নারায়ণগঞ্জে আসবে কি না। তবে লাইন হবে—এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আমরা চাই, নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি ঢাকার সংযোগ হোক। আগামী সপ্তাহেই মিটিংয়ের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি—সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী জেলা হিসেবে এমআরটি-২ প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল জোরালো ভূমিকা রাখছে। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন তারা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর শহরের নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ‘ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জ’ ব্যানারে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে এমআরটি-২ প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জ শহর, আদমজী ও মদনপুরকে যুক্ত রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়।
মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন,
“নারায়ণগঞ্জ একটি জনবহুল ও বাণিজ্যিক এলাকা। এখানকার জীবনযাত্রার উন্নয়নে মেট্রোরেল সংযোগের বিকল্প নেই। এটি হলে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে।”
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি বলেন,
“রাজপথে না নামলে এই দেশে কোনো দাবি আদায় হয় না। আমরা বারবার মেট্রোরেলের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় এটি লাভজনক নয়। অথচ মেট্রোরেল লাভ নয়, জনসেবার জন্য করা হয়। প্রতিদিন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যান—তাহলে লাভজনক না হওয়ার যুক্তি কোথায়?”
জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন,
“বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারায়ণগঞ্জের অবদান বিশাল। অথচ সবসময়ই অবহেলিত রাখা হয়। নারায়ণগঞ্জে মেট্রোরেল না আনা হলে সেটি হবে চরম বৈষম্য।”
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর জামায়াতের আমীর আবদুল জব্বার, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।