সর্বশেষ
আপনারা দেখছেন Insight Narayanganj-এর Beta Version

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে নগরীতে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিলো অয়ন ওসমানের ক্যাডার কাউসার ও রাসেল। নগরীর চাষাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়কের উকিলপাড়া, ২নং রেলগেইট, দেওভোগ, নিতাইগঞ্জ সহ আশপাশের এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষন করা সেই ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সর্বত্র। এখনো ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ছাপা হয়েছে খবরের পাতাতেও। তবে অস্ত্রধারী সেই কাউসার ও তার সহযোগি রাসেলের নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নেই একটি মামলাও! গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন ঘিরে সদর থানায় যে কয়টি মামলা রুজু হয়েছে, তার একটি মামলার এজাহারেও কাউসার ও রাসেলের নাম না আসায় চলছে সমালোচনা। কার ইশারায় সদর থানার মামলাগুলোর এজাহারে আসামীর তালিকায় উঠে আসেনি কাউসার ও রাসেলের নাম, সেই প্রশ্ন সচেতন মহলে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, অয়ন ওসমানের ক্যাডার হলেও কাউসারের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক বিদ্যমান। ওই দুই কাউন্সিলরের সাথে ওসমান পরিবারের সম্পর্ক ছিলো ওপেন সিক্রেট। এর মধ্যে একজন দেশের আলোচিত কাউন্সিলর হিসেবেও পরিচিত। আরেকজন আওয়ামী লীগের সময়ে সেলিম ওসমানের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন। তাদের তদবিরের কারণে অস্ত্রধারী কাউসার প্রকাশ্যে গুলি করে এবং নগরীতে তান্ডব চালালেও সদর থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে।


এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্তকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনসাইট নারায়ণগঞ্জকে বলেছেন, ‘যখন এই মামলাগুলো রুজু হয়, তখন আমি নারায়ণগঞ্জে ছিলাম না। তাছাড়া এই মামলাগুলো পুলিশ বাদি হয়ে করেনি। যারা ভুক্তভোগি ছিলো, তারা করেছে। এখন বাদী কোনো চাপ বা অন্যকোনো কারণে জড়িত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়েছে কিনা, সেটা আমার জানা নেই। তবে এইটুকু বলতে পারি যে, যারা অপরাধী তারা কোনো ভাবেই ছাড় পাবে না। পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’


জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের পলাতক এমপি শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আহমেদ কাউসার। অন্যদিকে, কাউসার সাম্রাজ্যের প্রধান সিপাহ সালার ছিলো শহীদনগর এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার রাসেল। কাউসার সহ ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অবৈধ অস্ত্রের মজুদ কোথায় ছিলো বা এখনো কোথায় এবং কোন কোন ব্যক্তির হেফাজতে রয়েছে, এমন তথ্য রাসেলের অজানা নয় বলে জানিয়েছে বিশেষ একটি সূত্র।


এমনকি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে অয়ন ওসমান, কাউসার ও তাদের সহযোগিরা যখন প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি বর্ষন করেছিলো, তখনও ঘটনাস্থলে অস্ত্র-সহ উপস্থিত দেখা গেছে এই রাসেলকে। এরপরও, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় সন্ত্রাসী রাসেলের কোনো নাম নেই। নাম দেখা যায়নি অয়ন ওসমানের প্রধান ক্যাডার আহমেদ কাউসারেরও। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিষ্ময় প্রকাশ করছেন।


এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউসার এখনো পলাতক থাকলেও তার সহযোগি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাসেল এখনো এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এলাকায় এখনো রাসেলের কিশোরগ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের আমলে যেমন বেপরোয়া ছিলো, এখনো তেমনই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এই গ্রুপের খুটির জোর কোথায়, কিংবা বর্তমানে কাদের শেল্টারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।


অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে অয়ন ওসমান ও কাউসারের প্রভাবে শহীদ নগর এলাকায় রাসেল সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলো। জমি দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে টেন্ডারবাজীতেও দেখা গেছে এই রাসেলকে। পাশাপাশি ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণেও ছিলো রাসেলের নাম। অস্ত্রধারী এই সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোড়ালো দাবি উঠেছে স্থানীদের মাঝে।

শেয়ার করুন